ওয়ার্ডপ্রেস কি ?

ওয়ার্ডপ্রেস একটি ওপেনসোর্স ব্লগিং কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ( CMS ) । ওয়ার্ডপ্রেস ব্যাবহার করে ইউজার খুব সহজে একটি ওয়েবসাইট বানাতে পারে ।  বর্তমানে ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ৩৯.৫% ওয়েবসাইট তৈরি হচ্ছে । আপনি যদি ৪টি ওয়েবসাইট ভিজিট করেন , তার একটি ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে তৈরি ! 

কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম কি ?

কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম হল একটা সফটওয়্যার , যেটার সাহায্য ইউজার বিভিন্ন এলিমেন্ট ব্যাবহার করে কোন টেকনিক্যাল জ্ঞান ছাড়াই ওয়েবসাইট বানাতে পারে। 

ওয়ার্ডপ্রেসের ইতিহাস বাংলায় জানুন –

ওয়ার্ডপ্রেস একটি ওপেন সোর্স ব্লগিং প্লাটফর্ম ( যদিও অনেক প্লাগিন ব্যাবহার করে অনেক ধরনের ওয়েবসাইট বানা যায়) । ওয়ার্ডপ্রেস PHP প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে লেখা । ডাটাবেস হিসেবে MySQL এবং MariaDB ব্যাবহার হয় । ওয়ার্ডপ্রেসের শুরুটা হয় ২০০১ সালে রিলিজ হওয়া  b2/cafelog ব্লগিং প্লাটফর্ম থেকে। যেইসময়ে বি২ ব্লগিং প্লাটফর্ম চলত । ২০০২ সালে  b2 এর ডেভেলপাররা হটাত  এই আপডেটের কাজ বন্ধ করে দেয় ।

সেই সময় b2 ব্লগের একজন ইউজার ছিলেন আমেরিকান ডেভেলপার Matt Mullenweg । তিনি তার ব্লগে লেখেন b2 ব্লগিং নিয়ে সে একটা Fork প্রোজেক্ট বানাতে চায়। 

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং- এ যখন ডেভেলপাররা কোন একটা সোর্স কোডের কপি থেকে একটা সফটওয়্যার প্যাকেজে সম্পূর্ণ আলাদা একটা সফটওয়্যার তৈরি করে তাকে Forking বলে।

WordPress online CMS software ব্যবহার করাটা কিন্তু অনেক সহজ। এবং, বিশ্বের প্রায় ৪৫% ওয়েবসাইট আজ ওয়ার্ডপ্রেস দ্বারা তৈরি। Netcraft দ্বারা প্রচার করা সার্ভেতে পাওয়া গেছে যে, বিশ্বের প্রায় ৭৫ হাজার লক্ষ থেকেও বেশি ওয়েবসাইট WordPress CMS software দ্বারা বানানো।

তাই, WordPress কতটা বেশি পপুলার ও জনপ্রিয়, সেটা তো আপনারা বুঝতেই পারছেন।

শেষে, যদি আপনি একজন ওয়েব ডিসাইনার (web designer), ওয়েব ডেভেলপার (web developer), ব্লগার (blogger) বা নিজেই একটি perfect website তৈরি করার কথা ভাবছেন, তাহলে ওয়ার্ডপ্রেসের ব্যাপারে জেনে নেয়াটা আপনার জন্য অনেক জরুরি।

সোজা ভাবে বললে, “WordPress” এমন একটি সহজ এবং জনপ্রিয় মাধ্যম যেটা ব্যবহার করে আপনি নিজের একটি ওয়েবসাইট (website) বা ব্লগ (blog) তৈরি করতে পারবেন।

এবং, এই মাধ্যম কতটা জনপ্রিয় এবং সহজ, সেটা বোঝা যায় এর ব্যবহারকারীদের অধিক সংখ্যার ওপরে। ইন্টারনেটে থাকা কোটি কোটি সব ওয়েবসাইট গুলির ভেতরে ৪৫% থেকেও বেশি ওয়েবসাইট ওয়ার্ডপ্রেস দ্বারা তৈরি।

এখন, “WordPress মানে কি” এই ব্যাপারে যদি অল্প টেকনিক্যালি (technically) বলা হয়, তাহলে সেটাও বুঝে নেয়াটা অনেক সহজ।

WordPress হলো সব থেকে বেশি পপুলার একটি open source Content Management System (CMS), যেটা জেকেও নিজের ওয়েব সার্ভারে (web server) ফ্রীতেই ইনস্টল করে, যেকোনো রকমের একটি ব্লগ বা ওয়েবসাইট বানিয়ে নিতে পারবেন।

ওয়ার্ডপ্রেস বিশ্বের সব থেকে শক্তিশালী কিন্তু অনেক সহজ একটি ফ্রি অনলাইন ওয়েবসাইট তৈরি করার মাধ্যম যেটাকে PHP র দ্বারা লিখা হয়েছে।

মনে রাখবেন, ওয়ার্ডপ্রেস দ্বারা ওয়েবসাইট বানানোর জন্য, আপনার একটি ওয়েব হোস্টিং একাউন্ট বা হোস্টিং সার্ভার থাকতে হবে। এবং, তারপর আপনি নিজের সার্ভারে এই WordPress CMS install করে যেকোনো ধরণের ওয়েবসাইট তৈরি করে নিতে পারবেন।

এমনিতে, ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য আরো অনেক ধরণের online CMS software রয়েছে। যেমন, Joomla, Drupal, Typo3.

এই, CMS software গুলিও ব্লগ ও ওয়েবসাইট তৈরির জন্য অনেক পপুলার। কিন্তু, ওয়ার্ডপ্রেস এর তুলনায় অনেক বেশি কম।

 

ব্রিটিশ ডেভেলপার Mike Little যখন Matt Mullenweg এর পোস্টটা দেখে তখন তিনি কমেন্টের মাধ্যমে তার সাথে যোগাযোগ করে । যদি সে সত্যি সিরিয়াস হয়ে থেকে Forking করার জন্য সে তার সাথে কাজ করতে চায় । তারপর দুজনে একসাথে ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপের কাজ শুরু করেন । ওয়ার্ডপ্রেসের প্রথম ভার্সন রিলিজ হয় ২৭ মে ২০০৩। মজার বিষয় হল , বি২ এর ডেভেলপাররা যদি আপডেট বন্ধ করে না দিত। তাহলে এমন অসাধারণ একটি প্লাটফর্ম আমরা পেতাম না। 

First Version is 0.7

যেখানে কোন ড্যাশবোর্ড ছিলনা। কন্টেন্ট লিখে একটা ক্যাটেগরিতে রাখা হত । পোস্টের নিচে কমেন্ট করা যেত।৪ বছর পরে প্লাগিন ফিচার আসে।

Plugin Release on Version 1.2

ড্যাশবোর্ড সিস্টেম আসে ভার্সন ১.৫ তে –   Strayhorn – 2005 নামে ভার্সনে । 

 অনেক কন্ট্রিবউটর নানা রকম  ডিজাইন এবং বাগ ফিক্সিং করতে করতে ওয়ার্ডপ্রেসের উন্নতি করতে থাকে। এদিকে দ্রুতগতিতে ওয়ার্ডপ্রেসের  ইউজারও বাড়তে থাকে। 

ইউজার এক্সপেরিএন্স সহজ করার জন্য Parker – ২০১৩ নামে  3.8 ভার্সনে যুগান্তকারী ড্যাশবোর্ড রিলিজ হয়। যা আজকে আমরা ব্যাবহার করতেছি।

ওয়ার্ডপ্রেস 5.0 ভার্সনে আরও একটি অসাধারন ফিচার আসে Block Editor । যা আগের ক্লাসিক এডিটরকে বাদ দিয়ে দেয়। এখন আপনি যদি নতুন ওয়ার্ডপ্রেস ইন্সটল করেন , তাহলে এই এডিটর দেখতে পারবেন ।

যখন Classic Editor আসে তখন সেটাও অসাধারণ ছিল । এটা প্রায় Microshoft Word এর মত । যা পোস্ট পাবলিশ করাকে সহজ করে দিচ্ছিল। কিন্তু ইমেজ এবং অন্য মিডিয়া প্রপার্টি গুলোলে আলাইন করতে ঝামেলা পোহাতে হত । অনেক ওয়ার্ডপ্রেস ইউজাররা বিভিন্ন পেজ বিল্ডার এবং প্লাগিন ব্যাবহার করে অনেক সুন্দর করে পোস্ট করত।

এখন ব্লক এডিটর আসাতে খুব সহজে কোন বাড়তি প্লাগিন ছাড়া পোস্ট করা যাচ্ছে। যা এখনও বিভিন্ন আপডেটের মাধ্যমে ইম্প্রভ করা হচ্ছে। 

 

 

এক নজরে ওয়ার্ডপ্রেসের ইতিহাস -

  • ওয়ার্ডপ্রেস একটি ওপেন সোর্স প্লাটফরম
  • ২০০৩ সালে B2 নামের ব্লগিং প্লাটফরম থেকে যার জন্ম
  • ওয়ার্ডপ্রেসের উদ্ভবক Matt Mullenweg
  • প্লাগিং ফিচার আসে ২০০৪ সালে
  • ডায়নামিক পেজ এবং থিম সিস্টেম আসে ২০০৫ সালে।
  • পুরো ইন্টারনেটের ৩৪% ওয়েবসাইট ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে তৈরি
  • প্রতি ১০০ টি ওয়েবসাইটের ১৪.৫% ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে তৈরি হচ্ছে।
  • প্রতি প্রায় ঘণ্টায় ৩৮০ টা ওয়েবসাইট তৈরি হয়।

 

WordPress এর লাভ ও সুবিধে (Benefits of using WordPress)

WordPress, অনলাইনে ওয়েবসাইট ও ব্লগ তৈরি করার সব থেকে জনপ্রিয় সফটওয়্যার হওয়ার প্রধান কারণ হলো, “এই সফটওয়্যার এর প্রচুর লাভ রয়েছে“.

প্রথমেই, এরকম একটি অ্যাডভান্সড (advanced) ধরণের সফটওয়্যার আপনারা ফ্রীতেই পেয়ে যাচ্ছেন। WordPress ব্যবহার করার জন্য আপনার কোনো টাকা দিতে হয়না।

অনলাইন সফটওয়্যার হওয়ার জন্য, আপনি নিজের ব্লগ বা ওয়েবসাইটের কাজ যেকোনো জায়গার থেকেই করতে পারবেন। আপনার কেবল একটি ল্যাপটপ এবং ইন্টারনেট কানেক্শনের প্রয়োজন হবে।

WordPress সম্পূর্ণ ভাবে SEO friendly . মানে, ওয়ার্ডপ্রেস এমন কিছু সহজ এবং standard রকমের codes ব্যবহার করে ওয়েবসাইট তৈরি করে যেগুলির জন্য অনেক সহজে আপনার ওয়েবসাইট ও ব্লগ Google search engine এ index হতে সাহায্য করে।

WordPress আজ কোটি কোটি webmasters দেড় ভরসা। এবং, এই ভরসা বজায় রাখার জন্য, ওয়ার্ডপ্রেস তার নিরাপত্তার দিগে অনেক ভালো ভাবে ধ্যান দিয়েছে। একটি ওয়ার্ডপ্রেস ব্লগ বা ওয়েবসাইট, হ্যাক (hack) করা বা তার ক্ষতি করাটা কিন্তু ৯৮% অসম্ভব।

কেবল ব্লগ বা সাধারণ ওয়েবসাইট না, আপনি এই CMS software ব্যবহার করে বিভিন্ন রকমের ওয়েবসাইট নিজেই তৈরি করতে পারবেন। যেমন, social media website, e-commerce website, company website, forum এবং আরো অনেক ধরণের।

হাজার হাজার ফ্রি থিম (theme) এবং প্লাগিন (plugin) পেয়ে যাবেন, যেগুলি ব্যবহার করে নিজের ওয়েবসাইটের ক্ষমতা, সৌন্দর্য, ডিসাইন এবং ফাঙ্কশন (function) বাড়িয়ে নিতে পারবেন।

অনেক সহজে থিম (theme) বদলে দিয়ে নিজের ব্লগের ডিজাইন (design) ও বদলে দিতে পারবেন।

সব রকমের latest এবং advanced function ওয়ার্ডপ্রেস আপনাদের দিবে। যেমন, social sharing options, responsive website design, SEO Friendly structure, easy customization, plugins ও আরো অনেক functions রয়েছে।

Customize অপশনে গিয়ে, আপনারা নিজের ব্লগ বা ওয়েবসাইট এর ডিজাইন অনেক সহজে এডিট করতে পারবেন live preview সহ।

ওয়ার্ডপ্রেস প্লাগিন কি ?
(WordPress plugin)

একটি ওয়ার্ডপ্রেস প্লাগিন হলো এক ধরণের আলাদা সফটওয়্যার, যেটা নিজের ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইটে ইনস্টল করে, নিজের ব্লগ বা ওয়েবসাইটের কার্যক্ষমতা, ফাঙ্কশন বা ফিচারস (features) বাড়িয়ে নিতে পারবেন।

WordPress plugin, আপনার ওয়েবসাইটের যেকোনো function এর কর্মক্ষমতা অধিক বাড়িয়ে দিতে পারে। এবং, তাছাড়া বিভিন্ন নতুন নতুন functions ওয়েবসাইটে যোগ করতে পারে।

এটা, কিছু পরিমানে মোবাইলের applications এর মতোই বলা যেতে পারে। যেভাবে, আমরা Google play store এ গিয়ে, বিভিন্ন রকমের apps মোবাইল ফোনে install করে নতুন নতুন functions যোগ করি, ঠিক সেভাবেই, ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইটেও আমরা বিভিন্ন ফ্রি বা পেইড plugin ইনস্টল করে, নিজের ওয়েবসাইটে অসংখক function যোগ করে নিতে পারি।

WordPress লোকেদের মধ্যে এতোটা বিখ্যাত হওয়ার কারণ এটাও যে, নিজের ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইটে আলাদা করে যেকোনো function যোগ করার জন্য, আপনারা হাজার হাজার ফ্রি প্লাগিন পেয়ে যাবেন।

উদাহরণ স্বরূপে, নিজের ব্লগে বা ওয়েবসাইটে প্লাগিন এর মাধ্যমে আলাদা করে, social media sharing button, email subscription box, social media profiles, website security options, author box, related articles options এবং আরো হাজার হাজার নতুন functions যোগ করতে পারবেন।

এতে, অনেক সহজে আপনি নিজের ওয়েবসাইটকে নিজের হিসেবে তৈরি করতে পারবেন। সে চাই, ডিজাইনের দিক দিয়ে হোক, নিরাপত্তার দিক দিয়ে হোক বা নতুন নতুন ফাঙ্কশন ওয়েবসাইটে যোগ দেয়ার কথা হোক, সবটাই প্লাগিন ব্যবহার করে সহজেই করে নিতে পারবেন।

Official WordPress plugin directory তে আপনারা হাজার হাজার ফ্রি ওয়ার্ডপ্রেস প্লাগিন পেয়ে যাবেন।

তাহলে, ওয়ার্ডপ্রেস প্লাগিন কি, সেটা বুঝলেন তো ? যদি এখনো বুঝেননি তাহলে নিচে কমেন্ট করে বলুন।

তাহলে, ওয়ার্ডপ্রেসের ব্যাপারে এতো কিছু বলার পর, এখনো যদি আপনার মনে এই প্রশ্ন আসছে যে, ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য “কেন ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করবো ?” তাহলে ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার কারণ অনেক।

ওয়ার্ডপ্রেস একটি advanced এবং multi functionality CMS software যেটা আপনারা ফ্রীতেই ব্যবহার করতে পারছেন।

যেকোনো ধরণের ওয়েবসাইট এখানে বানানো সম্ভব।

Scroll to Top